কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ২০১২ সালে কেনিয়ার একটি এলাকা থেকে ২৭ জন মানুষের ফসিল হয়ে যাওয়া হাড় উদ্ধার করেন। এই হাড়গুলো পরীক্ষা করে জানা যায় এই লোকগুলো আসলে গণহত্যার শিকার হয়েছিল, সেটাও আজ থেকে প্রায় ১০০০০ বছর আগে। এই ২৭ জনের মধ্যে কমপক্ষে ৮ জন মহিলা এবং ৬ জন ছিল শিশু। সাধারণ কোন লড়াই হলে মহিলা এবং শিশুগুলোকে হত্যা করার কোন কারনই ছিল না। দুইটি গ্রুপের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর লড়াইতে তাদের মৃত্যু হয়, কিন্তু শেষ পর্যত্ত এই মহিলা এবং শিশুগুলোকেও বাঁচতে দেওয়া হয়নি। এটা ছিল স্পষ্ট গণহত্যা। এখানে অবাক হওয়ার মত ব্যপার হলো, এই মানুষগুলো ছিল যাযাবর, হান্টার গ্যাদারার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বিজ্ঞানি স্টিভেন পিংকার প্রচুর তথ্য প্রমাণের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে এই ধরনের গণহত্যা বা সহিংসতা সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই হয়ে আসছে। শুনতে হয়ত আশ্চর্যের লাগবে, তাঁর গবেষণা থেকে দেখা যায় যে- মানুষের মধ্যে সহিংসতার পরিমাণ বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রাচীনকালেই অনেক বেশি ছিল। বর্তমান সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হওয়ার কারনে আমরা মিডিয়াতে প্রচুর হত্যা, যুদ্ধ আর সহিংসতার খবর শুনতে পাই। কিন্তু পিংকারের তথ্য প্রমাণ বলছে, বর্তমান সময়ের এইসব সহিংসতা বা যুদ্ধ আসলে প্রাচীনকালের তুলনায় কিছুই না। প্রাগৈতিহাসিককালে মানুষ আজকের দিনের চেয়ে বরং আরও অনেক বেশি সহিংস্র ছিল।
স্টিভেন পিংকার তাঁর “বেটার এঞ্জেলস অফ আওয়ার টাইম” বইতে প্রচুর তথ্য প্রমাণের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে, মানুষ যত শিক্ষিত হয়েছে, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ যত বৃদ্ধি পেয়েছে- মানুষের মধ্যে সহিংসতার মাত্রা তত কমেছে। তিনি এক্ষেত্রে জাতিরাষ্ট্র গঠন, ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার, শিক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, যুক্তি দিয়ে চিন্তা করার দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়কে সবথেকে বেশি জোর দিয়েছেন। তবে শুনতে যতটা সরল মনে হচ্ছে বিষয়টি অতটা সরল নয়। মানুষ কি আসলেই দিন দিন যুদ্ধ এবং সহিংস প্রবনতা থেকে সরে আসছে, নাকি দিন দিন আরও বেশি সহিংস হয়ে উঠছে তা বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝতে চাইলে পড়ে ফেলুন স্টিভেন পিংকারের লেখা চমৎকার এই বইটি।
Reviews
There are no reviews yet.